বিলিরুবিন কী
বিলিরুবিন হলো একটি হলুদ রঙের পদার্থ, যা শরীরের পুরানো রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার ফলে তৈরি হয়। সাধারণত, লিভার এই বিলিরুবিনকে পিত্তরসের সাথে মিশিয়ে দেয় এবং শরীর থেকে বের করে দেয়।

জন্ডিস কী
যখন রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখন ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং প্রস্রাব হলুদ হয়ে পড়ে। এই অবস্থাকেই জন্ডিস বলে।
বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
সাধারণত, রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা 1.2 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের কম থাকে। যখন এই মাত্রা 3 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হয়ে যায়, তখন জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে, বিলিরুবিনের সঠিক মাত্রা এবং জন্ডিসের তীব্রতা ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে।
জন্ডিসের কারণ
জন্ডিসের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- যকৃতের রোগ: হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস ইত্যাদি।
- পিত্তনালির সমস্যা: পিত্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া, পিত্তথলির পাথর ইত্যাদি।
- রক্তের রোগ: অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি।
- জন্মগত সমস্যা: গিলবার্টের সিনড্রোম ইত্যাদি।
- অন্যান্য কারণ: কিছু ওষুধ, বিষক্রিয়া, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি।
জন্ডিসের লক্ষণ
জন্ডিসের সাধারণ লক্ষণগুলি হল:
- ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া
- অরুচি
- ক্লান্তি
- বমি বমি ভাব
- পেট ব্যথা
- চুলকানি
জন্ডিসের চিকিৎসা
জন্ডিসের চিকিৎসা তার কারণের উপর নির্ভর করে। চিকিৎসকরা সাধারণত রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস নেন, শারীরিক পরীক্ষা করেন এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। এরপর তারা যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করেন।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন
যদি আপনি জন্ডিসের কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
- এই তথ্যটি শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য এবং এটি কোনো ধরনের চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প নয়।
- জন্ডিস একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তাই যদি আপনি জন্ডিসের কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়লে কী কী লক্ষণ দেখা যায়
- ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়।
- মূত্রের রঙ গাঢ় হলুদ বা ব্রাউন হয়ে যায়।
- মলের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
- ক্লান্তি, দুর্বলতা ও অরুচি।
- বমি ও বমি বমি ভাব।
জন্ডিসের কারণ কী
- হেপাটাইটিস বা যকৃতের সংক্রমণ।
- গলব্লাডারের পাথর বা পিত্তনালীর ব্লকেজ।
- অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ।
- হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া যেখানে রক্তকণিকা অতিরিক্ত ভেঙে যায়।
- কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ ও টক্সিন।
জন্ডিসের চিকিৎসা কীভাবে করা হয়
- প্রাথমিকভাবে কারণ নির্ধারণ করে তা নিরাময় করা হয়।
- সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
- পিত্তনালীর ব্লকেজ থাকলে সার্জারি বা এন্ডোস্কোপিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
- হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে বিশেষ ঔষধ ও ডায়েট মেনে চলা হয়।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
জন্ডিস প্রতিরোধের উপায় কী
- হেপাটাইটিসের টিকা নেওয়া।
- অ্যালকোহল সেবন কমানো বা বন্ধ করা।
- স্বাস্থ্যকর ও পরিষ্কার খাবার খাওয়া।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।
- সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
প্রশ্ন ১: জন্ডিস কী?
উত্তর: জন্ডিস হল একটি রোগের লক্ষণ যেখানে ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং অন্যান্য মিউকাস ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়। এটি মূলত রক্তে বিলিরুবিনের অতিরিক্ত মাত্রার কারণে ঘটে।
প্রশ্ন ২: বিলিরুবিন কী?
উত্তর: বিলিরুবিন হল একটি হলুদ রঙের পিগমেন্ট যা লোহিত রক্তকণিকার ভাঙ্গন থেকে তৈরি হয়। লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার পরে, হিমোগ্লোবিন থেকে বিলিরুবিন তৈরি হয় এবং এটি যকৃতের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তের সঙ্গে মল-মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
প্রশ্ন ৩: বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত?
উত্তর: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রক্তে মোট বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত ১.২ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার (mg/dL) এর নিচে থাকে। তবে এটি ০.৩ mg/dL থেকে ১.২ mg/dL এর মধ্যে থাকতে পারে।
প্রশ্ন ৪: বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়?
উত্তর: যখন রক্তে মোট বিলিরুবিনের মাত্রা ২-৩ mg/dL এর বেশি হয়ে যায়, তখন জন্ডিসের লক্ষণগুলি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে এই মাত্রা কিছুটা ভিন্ন হতে পারে এবং তাদের ক্ষেত্রে ৫ mg/dL এর বেশি হলে জন্ডিস ধরা পড়তে পারে।
উপসংহার
জন্ডিস একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ যা যকৃতের কার্যকারিতা বা রক্তের সমস্যার নির্দেশ করতে পারে। বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।