মালয়েশিয়া কলিং ভিসার আজকের খবর 2025

মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা (Visa Dengan Rujukan) ব্যবস্থা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কর্মপ্রত্যাশীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থানের voie। ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতোশ্রী সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইল কর্তৃক নতুন করে কলিং ভিসা চালুর ঘোষণা প্রদান করা হয় । এই নিবন্ধে মালয়েশিয়া কলিং ভিসার সর্বশেষ খবর, আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

১. কলিং ভিসা কী এবং কীভাবে কাজ করে?

১.১ ভিসাটির প্রকারভেদ

মালয়েশিয়া কলিং ভিসা মূলত রেফারেন্স সহ ভিসা (Visa With Reference – VWR) এর একটি অনানুষ্ঠানিক নাম । এটি একটি বিশেষ ধরনের প্রাক-প্রবেশ ভিসা, যা মালয়েশিয়ার একটি নিবন্ধিত সংস্থা বা নিয়োগকর্তা (স্পনসর) এর মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। স্পনসর প্রথমে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নেন, তারপর বিদেশে অবস্থিত মালয়েশিয়ার মিশন ভিসা ইস্যু করে।

১.২ ভিসার মেয়াদ ও সীমাবদ্ধতা

কলিং ভিসা সাধারণত একটি একক-প্রবেশ ভিসা (Single Entry Visa) যা ইস্যুর পর ৩ মাসের মধ্যে ব্যবহার করতে হয়। মালয়েশিয়া পৌঁছে এরপর এটিকে পূর্ণাঙ্গ কাজের পাসে রূপান্তরিত করা হয়। এই ভিসার মাধ্যমে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তা এবং নির্দিষ্ট পদে কাজ করার অনুমতি থাকে।

মালয়েশিয়া কলিং ভিসার আজকের খবর 2025

২. কলিং ভিসা প্রক্রিয়া: পরিবর্তিত নিয়মাবলি

২.১ আবেদনের নতুন পদ্ধতি

২০২৫ সালের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কলিং ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ায় কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে:

  • এজেন্ট-ভিত্তিক আবেদন: আগের মতো কোনও এজেন্ট বা নিয়োগকর্তা সরাসরি আবেদন করতে পারবেন না। শুধুমাত্র খাতভিত্তিক অফিসিয়াল এজেন্সিগুলো আবেদন করতে পারবে ।
  • দ্বি-স্তরীয় অনুমোদন: আবেদনগুলি প্রথমে ফরেন ওয়ার্কার্স টেকনিকাল কমিটি যাচাই-বাছাই করবে এবং জয়েন্ট কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে ।
  • আবেদনের সময়সীমা: নতুন করে কলিং ভিসার আবেদন ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে ।

২.২ খাতভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ

মালয়েশিয়া সরকার ১৩টি সেক্টরে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে :

খাতের ধরননিয়োগের সুযোগ
কৃষি ও বাগানফসল উৎপাদন, পাম অয়েল চাষ
খনিখনিজ সম্পদ উত্তোলন
হোলসেল ও রিটেলবিক্রয় ও বিতরণ খাত
সিকিউরিটি গার্ডনিরাপত্তা служба
রেস্তোরাঁ ও খাদ্যহোটেল ও রেস্টুরেন্ট
লন্ড্রিধোয়া ও পরিষ্কার служба
কার্গোপণ্য পরিবহন
বিল্ডিং ক্লিনিংভবন পরিষ্কারকরণ

*সারণী: মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের জন্য উন্মুক্ত খাতসমূহ *

২.৩ বিশেষ বিধিনিষেধ

  • নির্মাণ খাত: শুধুমাত্র সরকারি প্রকল্পের জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে ।
  • উৎপাদন খাত: (Malaysian Investment Development Authority) অনুমোদিত নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার পাবে ।

৩. সতর্কতা ও বিভ্রান্তি: প্রকৃত চিত্র বনাম গুজব

৩.১ কোটা নিয়ে বিভ্রান্তি

আগস্ট ২০২৫-এ প্রকাশিত খবরে জানানো হয় যে মালয়েশিয়া ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫৬ জন শ্রমিকের জন্য কলিং ভিসার কোটা চালু করেছে । তবে বাংলাদেশ হাইকমিশন, কুয়ালালামপুর এই তথ্য স্পষ্ট করে জানায় যে এই সংখ্যাটি মোট অনুমোদিত কোটা, কিন্তু বর্তমানে কর্মরত প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক বাদ দিলে নতুন করে নিয়োগের সুযোগ প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৬ লাখ । এর মধ্যে বাংলাদেশিরা একটি অংশ পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

৩.২ প্রতারক চক্র থেকে সতর্কতা

কলিং ভিসা চালুর খবরে ইতিমধ্যেই一些 অসাধু এজেন্ট ও দালাল চক্র সক্রিয় হয়েছে। তারা শ্রমিকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেওয়া শুরু করেছে । মালয়েশিয়ান দূতাবাস এবং বাংলাদেশ হাইকমিশন ইতিমধ্যেই সবাইকে সতর্কতা জারি করেছে:

  • কোনো এজেন্টের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেওয়া বা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • সরকারি চ্যানেল (বোয়েসেল, বিএমইটি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়) এর মাধ্যমে তথ্য নিশ্চিত করুন।
  • মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশে নিয়োগের প্রস্তাব এড়িয়ে চলুন, কারণ সেখানে কোনও MOU চুক্তি নেই ।

৩.৩ জিরো কস্ট নীতি

দু’দেশের সরকারের মধ্যে বিনা খরচে (Zero Cost) শ্রমিক প্রেরণের বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে । তবে এই প্রক্রিয়া কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই যে কেউ অগ্রিম টাকা দাবি করলে তার থেকে সতর্ক থাকা জরুরি।

৪. দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাব

৪.১ বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা

জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের মতে, মালয়েশিয়ায় সোর্স কান্ট্রিগুলো থেকে ৫-৬ লাখ শ্রমিক নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । এই সংখ্যার মধ্যে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য খোলা হলে তার একটি অংশ বা কোটা বাংলাদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের মতে ওই সংখ্যা বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত হতে পারে ।

৪.২ আঞ্চলিক সম্পর্ক ও ভিসা নীতির পরিবর্তন

মালয়েশিয়া তার ভিসা নীতি নিয়ে পরিবর্তন আনছে। ২০২৫ সালে চীন ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ভিসা ছাড়পত্র চুক্তি কার্যকর হয়েছে । অন্যদিকে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা ছাড়পত্র ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে । এই পরিবর্তনগুলি regional শ্রম বাজারের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

৫. ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সুপারিশ

৫.১ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

মালয়েশিয়া সরকার ভবিষ্যতে দেশের মোট জনশক্তির ১০%-এর বেশি বিদেশি শ্রমিক রাখতে চায় না । বর্তমান কোটা period শেষ হওয়ার পরে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ সীমিত হয়ে যেতে পারে। তাই বাংলাদেশের জন্য সময়মতো শ্রমিক প্রেরণ এবং দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

৫.2 আবেদনকারীদের জন্য সুপারিশ

  1. সরকারি চ্যানেল ব্যবহার: শুধুমাত্র বিএমইটি (Bureau of Manpower, Employment and Training) এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করুন।
  2. দক্ষতা উন্নয়ন: মালয়েশিয়ার চাহিদা অনুযায়ী relevant দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিন।
  3. আর্থিক সতর্কতা: জিরো কস্ট নীতি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অগ্রিম অর্থ প্রদান থেকে বিরত থাকুন।
  4. নথিপত্র যাচাই: নিয়োগকর্তা এবং এজেন্সির validity সরকারি sources থেকে verify করুন।

৬. প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

Q1: মালয়েশিয়া কলিং ভিসা কি চালু হয়েছে?

উত্তর: হ্যাঁ, মালয়েশিয়া সরকার কলিং ভিসার কোটা উন্মুক্ত করেছে । তবে, পুরো আবেদন প্রক্রিয়াটি এখনও সক্রিয় হতে কিছু সময় লাগতে পারে এবং এটি শুধুমাত্র অফিসিয়াল খাতভিত্তিক এজেন্সির মাধ্যমে হবে ।

Q2: মালয়েশিয়া কলিং ভিসার জন্য কতটি খাত খোলা হয়েছে?

উত্তর: মোট ১৩টি খাত খোলা হয়েছে । এর মধ্যে includes কৃষি, বাগান, খনি, হোলসেল ও রিটেল, গুদাম, security guard, রেস্তোরাঁ, লন্ড্রি, কার্গো এবং বিল্ডিং ক্লিনিং উল্লেখযোগ্য।

Q3: নির্মাণ খাতে কি কর্মী নেওয়া হবে?

উত্তর: হ্যাঁ, তবে শুধুমাত্র সরকারি নির্মাণ প্রকল্পের জন্যই সীমাবদ্ধ থাকবে । বেসরকারি প্রকল্পে আবেদনের সুযোগ নেই।

Q4: মালয়েশিয়া যেতে মোট খরচ কত হবে?

উত্তর: দু’দেশের সরকারের মধ্যে জিরো কস্ট (বিনা খরচে) কর্মী প্রেরণের বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে । তবে, এই নীতি কীভাবে এবং কখন বাস্তবায়িত হয়, সে সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। তাই, যে কেউ অগ্রিম টাকা দাবি করলে তার থেকে সতর্ক থাকুন।

Q5: কীভাবে প্রতারক চক্র থেকে নিজেকে রক্ষা করব?

উত্তর:বাংলাদেশ হাইকমিশন ও মালয়েশিয়ান দূতাবাসের সতর্কতা অবশ্যই মেনে চলুন ।
অগ্রিম টাকা/অর্থ প্রদান থেকে বিরত থাকুন।
শুধুমাত্র বিএমইটি, বোয়েসেল বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর অনুমোদিত এজেন্সির সাথেই যোগাযোগ করুন।
মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশে নিয়োগের প্রস্তাব এড়িয়ে চলুন, কারণ সেখানে এখনও কোনও চুক্তি (MOU) স্বাক্ষরিত হয়নি ।

Q6: আগের কলিং ভিসা বাতিল হয়ে গেলে কি আবার আবেদন করতে পারব?

উত্তর: এই বিষয়ে এখনও পরিষ্কার নির্দেশনা নেই। তবে, নতুন করে পুরো প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিয়োগকর্তা বা অফিসিয়াল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে জেনে নেওয়া।

Q7: ভিসার মেয়াদ কত দিন?

উত্তর: কলিং ভিসা সাধারণত একটি একক-প্রবেশ ভিসা (Single Entry Visa) যা ইস্যুর পর ৩ মাসের মধ্যে ব্যবহার করতে হয়। মালয়েশিয়া পৌঁছে এরপর এটিকে পূর্ণাঙ্গ কাজের পাসে রূপান্তরিত করা হয়।

Q8: আমার জন্য কোন খাতে আবেদন করা?

উত্তর: এটি আপনার skills。 construction থাকলে government project-related আবেদন, manufacturing থাকলে MIDA-অনুমোদিত factoryতে আবেদন করতে পারেন। services sector-এ (restaurant, laundry, security) opportunities ।

Q9: সরাসরি আবেদন করতে পারব?

উত্তর: না, এবার শুধুমাত্র অফিসিয়াল খাতভিত্তিক এজেন্সিগুলো আবেদন করতে পারবে । ব্যক্তি বা সাধারণ এজেন্টদের জন্য সরাসরি আবেদনের সুযোগ নেই।

Q10: সর্বশেষ খবর আমি পেতে পারি?

উত্তর: সবচেয়ে বিশ্বস্ত হলো:প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইট।
বিমিটি (BMET) অফিসিয়াল নোটিস।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইট।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ (JIM) official website।

উপসংহার

মালয়েশিয়া কলিং ভিসা পুনরায় চালু হওয়া বাংলাদেশি কর্মপ্রত্যাশীদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ। তবে, আবেদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং সরকারি নিয়ম কানুন মেনে। যে কোনও ধরনের প্রতারণা এড়াতে সরকারি ঘোষণা ও নির্দেশিকা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। আশা করা যায়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারিভাবে প্রক্রিয়া চালু হবে এবং বাংলাদেশি শ্রমিক তাদের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হবেন।

সরকারি ঘোষণা এবং নির্ভরযোগ্য sources থেকে তথ্য নিশ্চিত করে এগোনো এবং অর্থের লেনদেনের ক্ষেত্রে extreme সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ。 মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের demand এবং সুনাম both রক্ষা করতে স্বচ্ছতা এবং নিয়মকানুন imperative。

Leave a Comment